খাটি মধু চেনার উপায় বিস্তারিত জেনে নিন ।
প্রিয় পাঠক আপনি কি খাটি মধু চেনার উপাইয় জানতে চাচ্ছেন ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই । এছাড়াও এই আর্টিকেলে সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায় সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া আছে । আপনি এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
আমরা সাধারনত প্রায় সকল মানুষই মধু খাই । কিন্তু আমরা যেই মধু গুলো খেয়ে থাকি আসলে কি সেগুলো খাটি মধু ? চলুন খাটি মধু চেনার উপায় জেনে নেই । এবং ভেজাল যুক্ত মধু খাওয়া থেকে বিরত থাকি ।
ভুমিকা
আমরা জেসব মধু খায় সেগুলো আসলে আমাদের উপকারের জন্যই খায় । কিন্তু যদি মধু খেয়ে কোন উপকার ই না পায় , তাহলে মধু খাওয়ার মানে টা কি । তাই আমাদের উচিত খাটি মধু খাওয়া । আমাদের আসে পাশের দোকান গুলোতে দোকানিরা মধু বিক্রি করে । কিন্তু সেসব মধুতে কিন্তু ভেজাল দেওয়া থাকে ।
বাজারে অনেক ধরনের মধু পাওয়া যাই। কিন্তু আসল মধু খুব কম ই পাওয়া যাই । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আসল মধু কিভাবে চিনবো ।
খাঁটি মধু চেনার উপায়
খাটি মধু চেনার জন্য অনেক গুলো উপাই রয়েছে। এসব পদ্ধতি ব্যাবহার করে আপনি খুব সহজেই আসল মধু চিনে ফেলতে পারবেন । পানি দিয়ে মধু পরিক্ষা করা যাই । মধু কেনার সময় আপনি একটি গ্লাসে এক গ্লাস পানি নিবেন । যদি কাছে গ্লাস বা পানি না পাওয়া যায় তাহলে পানির একটি বতুল নিয়ে নিতে পারেন ।
এর পর সেই গ্লাস ভর্তি পানি অথবা বোতল ভর্তি পানি নিয়ে সেই পানির ভেতর এক ফোটা মধু ফেলে দিন । সেই মধুটি যদি ফোটা অবস্থাতেই পানির নিচ অংশে চলে যায় , তাহলে সেটা আসল মধু ।আর যদি সেটা পানির ওপরেই ভাস্তে থাকে তাহলে সেটা নকল মধু ।
আরও পড়ুন ঃ অ্যালোভেরা জেল মুখে মাখলে কি হয় বিস্তারিত জানুন ।
এছাড়াও কটন বার দিয়েও মধু পরিক্ষা করা যায় । একটি কটন এ কিছু অংশ মধু নিয়ে নিন । এবং সেই মধুতে আগুন জালিয়ে দেখুন যে আগুন ধরেছে কি । যদি সেটাতে আগুন ধরে যায় তাহলে সেটা আসল মধু । আর যদি আগুন না ধরে তাহলে বুঝতে হবে সেটা খাটি মধু না । কারন নকল মধুতে পানি মিশিয়ে বিক্রি করে ।
আর পানি মেসানো মধুতে পানি থাকার কারনে সেটাতে আগুন ধরে না ।এই পদ্ধতিটি ব্যাবহার করতে পারেন মধু কেনার সময় । এবং মধু কেনার সময় কিছু অংশ মধু আঙ্গুলে মাখিয়ে নিন । যদি দেখেন যে সেই মধু গুলো আঙ্গুলের চারিপাশে ছরিয়ে পরছে তাহলে বুঝবেন যে সেটা আসল মধু না ।
কারন আসল মধু অনেক ঘন হয় । যার কারনে সেটা খুব সহজেই চারিদিকে ছরিয়ে পরে না । আর যদি সেই মধু চারিদিকে ছরিয়ে পরে তাহলে বুঝবেন যে সেটা নকল মধু । কারন নকল মধু অনেক পাতলা হয় যার কারনে সেটা চারিদিকে খুব সহজেই ছরিয়ে পরে । মধু কেনার সময় আপনি এই উপাই গুলো অবলম্বন করে খাটি মধু কিনতে পারবেন ।
সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায়
আমরা যেহেতু বাঙালি মানুষ তাই যেকোনো কিছুতে আমাদের একটু সংকোচ বোধ থাকেই । কারন বাঙ্গালিরা সবসময় খাটি এবং আসল জিনিসটাই নিতে চাই । মৌমাছিরা নানান ফুলে ফুলে ঘুরে বেরিয়ে সেই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে । এবং সেই মধু তারা একটা নির্দিষ্ট জাইগাতে নিয়ে গিয়ে জড় করে । যেটাকে আমরা মউছাক হিসেবে চিনি ।
আরও পড়ুন ঃ কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ।
আমরা এখন সরিষা ফুলের মধু চেনার উপাই সম্পর্কে জানব । বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় তিন লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয় । আর এই সরিষার চাষ সাধারণত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের দিকে করা হয় । এ সরিষা চাষ করার কয়েকদিন পর থেকে সরিষা ফুল ফুটতে শুরু করে । এবং সে ফলে মৌমাছিরা ঘোরাফেরা করতে থাকে ।
মৌমাছিরা ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধু সংগ্রহ করে এবং সেগুলো তাদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে গিয়ে জমা করে রাখে । এ দেখে মউ চাষিরা সরিষা ক্ষেতের পাশে তাদের মৌ বক্স রেখে যায় । এবং মৌমাছিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় এবং সে বক্সে গিয়ে বসে । তারপর তারা সেই মধুগুলো চাষীদের রাখা বক্সে সংগ্রহ করে ।
এভাবে তৈরি হয় সরিষা ফুল থেকে খাঁটি মধু । এই সরিষা ফুলের মধুতে সরিষার একটা ঝাঁজালো ঘ্রাণ পাওয়া যায় । যা অন্যান্য ফুলের মধ্যে পাওয়া যায় না । সরিষা ফলের মধুর ঘনত্ব প্রায় অন্যান্য মধুর থেকে কমই থাকে । এ মধুতে কিছুটা ফেনা দেখতে পাওয়া যায় । সরিষা ফুলের মধু দেখতে কিছুটা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে । এবং এটা খেতেও খুব মিষ্টি ।
নষ্ট মধু চেনার উপায়
মধু সাধারণত অনেকদিন ধরে সংগ্রহ করে রাখা যায় । মধু সহজে নষ্ট হয় না, কিন্তু যেকোনো জিনিসেরই তো ভালো খারাপ দিক আছে । তেমনি মধুর ক্ষেত্রেও ঠিক ভালো-মন্দ রয়েছে । খাটে মধু এবং নষ্ট মধু চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। সে উপায়গুলো অবলম্বন করে ভালো এবং নষ্ট মধু চিহ্নিত করতে পারবেন ।
ভালো মধু হাতে নিলে সেটা চারিদিকে ছরিয়ে পরবে । কিন্তু খাটি মধু হলে সেটা সহজে গরিয়ে পরে না । কারন খাটি মধুর ঘনত্ত অনেক বেশি । আর নকল মধুর ঘনত্ব খুব কম । যার কারনে নকল মধু ছরিয়ে যায় খুব সহজেই । এবং মধুকে পানিতে ছেরে দিলে বোঝা যাই যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল ।
নকল মধু পানিতে ছেরে দিলে এটা খুব তারাতারি পানির সাথে মিশে যাই । আর খাটি মধু সহজে পানির সাথে মিশে না । এছাড়াও খাটি মধুতে আগুন ধরালে সেটা জলতে সুরু করে কিন্তু নকল মধুতে আগুন ধরে না । এই ভাবেই আপনি আসল মধু ও নকল মধু চিনতে পারবেন ।
মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়
মধু খাওয়ার বেশ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে । সেই নিয়ম কানুন মেনে যদি মধু নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে শরীরের পক্ষে খুবই উপকার লাভ করা যাবে । কিন্তু অতিরিক্ত মধু খেলে আবার সমস্যা দেখা দিতে পারে । প্রতিদিন সকালে এক টেবিল চামচ মধু এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশে হালকা গরম পানি দিয়ে যদি খালি পেটে খাওয়া যায় ।
তাহলে পেটের পিরা সহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এবং দেহের অনেক উপকার হয় । এছাড়াও শুধু দিনে নয় রাতেও মধু খাওয়ার নিয়ম রয়েছে । শরীরের চর্বি দূর করার জন্য রাতে খাবারের পর এবং শোবার আগে এক চামচ মধু এবং গরম পানি একসাথে মিশে খেয়ে নিতে পারেন । এতে করে শরীরের চর্বি কমবে ।
শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত মধু পান করা যেতে পারে । নিয়মিত মধু পান করলে পারে শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং মন ফ্রেশ থাকবে এবং মেজাজ খিটখিটে হবে না । মধু খাওয়ার জন্য কোন নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয় না । যখন ইচ্ছা তখনই মধু খাওয়া যায় । তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত মধু খাওয়া যাবে না ।
ওজন কমানোর জন্য মধু খেতে পারেন । আমরা প্রায় মানুষ চা বা কফির সাথে চিনি মিশিয়ে খায় । কিন্তু আমরা হয়তো জানি না যে এই চিনি আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে । তাই এই চীনের বদলে চা অথবা কফির সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে । তাহলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে ।
আরও পড়ুন ঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে কেক বানানোর উপায় যেনে নিন ।
মধু খাওয়ার উপকারিতা
মধু আসলে একটু অনেক উপকারী খাবার । এটি খেলে পারে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার লাভ করা যায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায় । মধু খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো ঃ
- নিয়মিত মধু খেলে হৃদরোগের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় । এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে ।
- আমাদের দেহে যে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে । এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মধু ।
- নিয়মিত মধু খাওয়ার কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায় এবং রক্তের পুষ্টিকর্য্য উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলোর চাহিদা মেটায় ।
- শরীরে যে গ্যাস এবং আলসার হয়ে থাকে এর থেকে সমাধান পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল মধু । মধু খাওয়ার ফলে গ্যাস ও আলসারের সমস্যা দূর হয়ে যায় ।
- মধু শরীরের দুর্বলতা দূর করে এবং শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে ।
- শরীর ও ফুসফুসের সমস্যা দূর করে ফুসফুস টি শক্তিশালী করে তুলতে এবং মুখের জড়তা দূর করতে মধু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
- শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
- শরীরে পুষ্টিকর ক্যালরি এবং শর্করা ও কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন গুলো বৃদ্ধি করে ।
- মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন যা উচ্চ রক্তচাপ ত্বকের সমস্যা এবং ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে ।
- মধু শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরের হাত-পা এবং বিভিন্ন জায়গার ব্যথা থেকে নিরাময় প্রদান করে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url