বিট লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বিট লবণ খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই জরুরী । আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বিট লবণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন ।
বিট লবণ আমরা সকলেই খেয়ে থাকি । কিন্তু সকালে হয়তো খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা কি সে সম্পর্কে জানিনা । এছাড়াও এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন লবণের উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো কি কি ।
ভুমিকা
আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি যে যখন তরকারি রান্না করা হয় তখন তাতে লবণ ব্যবহার করা
হয় । কারণ লবণ তরকারি কে সুস্বাদু করতে সাহায্য করে । তবে আমরা যে লবণ
তরকারিতে ব্যবহার করি সেই লবণ কিন্তু আসলে বিট লবণ নয় । আমরা
প্রায় বাদাম খেয়ে থাকি । বাদামের সাথে খুব গভীর সম্পর্ক আমাদের । তো
ওই
বাদাম খাওয়ার
সময় চেয়ে লবণ বা ঝাল দেওয়া হয় সেটাই আসলে বিট লবণ ।
বিট লবণ সম্পর্কে আপনার যদি কোন ধারণা না থাকে । তাহলে আপনি এই আর্টিকেলটি
পড়ে বিট লবণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন । বিট লবণ খেলে কি কি
উপকার হয় এবং কি কি ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে জানতে পারবেন । চলুন দেরি না করে
শুরু করা যাক ।
বিট লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা
বিট লবণ খাওয়া মানুষের জন্য কতটুকু কার্যকরি তা হয়তো আমরা সকলে জানি না
। আমরা প্রায় বিট লবণ খেয়ে থাকি । তবে অনেকেই আছে যারা বিট লবণ খায়
ঠিকই কিন্তু বিট লবণ আসলে কোনটা সেটা চেনেনা । এবং আমরা যে বিট লবণ খেয়ে
থাকি তার উপকারিতা এবং অপকারিতা কতটুকু সে সম্পর্কে হয়তো সকলে জানে না
।
অবশ্যই বিট লবণের উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে । যার প্রভাব আমাদের শরীরের
উপরে পড়ে । মানবদেহের বিভিন্ন অংশ যেমন হৃদযন্ত্র, কিডনি, যকৃত ইত্যাদি অঙ্গে লবনের গুরুত্ব রয়েছে অনেক । এই লবণ খেলে
কি কি উপকার হয় এবং কি কি অপকার হয় তা এখন জানতে পারবেন ।
আরও পড়ুন ঃ খাটি মধু চেনার উপায় বিস্তারিত জেনে নিন
বিট লবণের উপকারিতা
আমাদের শরীরে অনেক খারাপ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে । যা আমাদের শরীরের ক্ষতি ডেকে
আনে । বিট লবণ খাওয়ার ফলে শরীরের এক খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলো দূর হয়ে যায়
। বিট লবণে খনিজ উপাদান থাকে । যা আমাদের শরীরে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল
হিসেবে কাজ করে থাকে । এবং লবণে সোডিয়াম নামক উপাদান থাকে ।
এই সোডিয়াম শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে । এবং যাদের অতিরিক্ত ওজন তাদের
জন্য বিট লবণ খাওয়া খুবই জরুরী । কারণ বিট লবণ অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়তা
করে । শরীরের বিভিন্ন কোষগুলোতে বিট লবণ পুষ্টি ও উপাদান দিয়ে থাকে
। এই পুষ্টি উপাদান মানবদেহে হজমে সহায়তা করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি
করে ।
এছাড়াও অনেক মানুষ রয়েছে যাদের সুগারের সমস্যা আছে । এই সুগারের রোগীদের
বিট লবণ খাওয়া উচিত । কারণ বিট লবণ রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে
। এজন্য সুগার রোগীরা চাইলে নিয়মিত বিট লবণ খেতে পারেন ।
বিট লবণে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি নামক একটি উপাদান রয়েছে । যা যা আমাদের
শরীরে ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান । এই উপাদানটি ত্বককে সুন্দর
এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে । এবং ত্বক ভালো রাখে ও ত্বকের
শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে । এজন্য সকলের উচিত নিয়মিত বিট লবণ
খাওয়া ।
বিট লবনের অপকারিতা
বিট লবন খাওয়া যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি এটা ক্ষতিকরও বটে
। অনেক গবেষণা করে দেখা গেছে যে বিট লবণে প্রচুর
পরিমাণ ফ্লোরাইড রয়েছে । এই ফ্লোরাইড প্রতি মিলিয়নে থাকে প্রায়
আড়াইশো শতাংশ । এ ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা থাইরয়েড
গ্রন্থি, হাড় এবং জয়েন্ট এর জন্য খুবই মারাত্মক ।
এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে যদি বিট লবণ খাওয়া হয় তাহলে শরীরের
রক্তস্বল্পতার দেখা দিবে । এবং খাবার সময় এই লবণের মাত্রা বেশি হওয়ার
কারণে রক্ত প্রবাহে বাধা প্রদান করে । যা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর
একটি দিক । এবং বিট লবণ পাকস্থলীর ক্ষতি করতে সক্ষম, যদি তা পরিমাণের
চেয়ে বেশি হয়ে যায় ।
ভারতের দিল্লিতে একটি গবেষণা এবং পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর মতে জানা
গেছে যে দীর্ঘদিন ধরে বিট লবণ খাওয়ার কারণে এটা একটি বিষক্রিয়ায় রূপ
নিয়েছে । এই বিষক্রিয়াটি যে সকল মানুষদের ওপর প্রভাব ফেলেছে তাদের
সংখ্যা প্রায় ৬৬ মিলিয়ন এর ও বেশি । এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি
করতে পারে এই বিট লবণ ।
আমাদের উচিত বিট লবণ খাওয়ার সময় সেটা পরিমাণ মতো খাওয়া । কারণ লবনের
যেরকম অপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি অপকারিতা রয়েছে । তবে যদি বিট লবণ
পরিমাণ এর চেয়ে বেশি খাওয়া হয় তাহলে তা ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে । এবং
বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে । এজন্য আমাদের
উচিত পরিমাণ মতো লবণ খাওয়া ।
লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা সাধারণত লবণ ব্যবহার করে থাকে তরকারিতে । শুধু যে তরকারিতে তাও কিন্তু নয় । তরকারির পাশাপাশি আরো খাবার-দাবারে লবন ব্যবহার করা হয় । যাতে করে সে খাবারটা সুস্বাদু হয় । লবণ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং তার সাথে অনেক অপকারিতা রয়েছে । লবণে কি কি উপকার রয়েছে এবং কি কি অপকার রয়েছে সে বিষয়ে এখন আলোচনা করব ।
লবণের উপকারিতা
অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে লবণ । যাদের অতিরিক্ত ওজন তারা নিয়মিত
পরিমাণমতো লবণ খেলে অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারবেন । তবে ওজন কমবে বলে অতিরিক্ত
পরিমাণে লবণ খাওয়া যাবেনা । এতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে
। এজন্য নিয়মিত নিয়ম অনুযায়ী লবণ খেতে হবে ।
আরও পড়ুন ঃ ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন
লবণ আপনার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান হতে পারে । যদি লবণের
ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারেন । ত্বকে অনেক কোষ রয়েছে , ত্বকের এই
কোষগুলো সুস্থ এবং সতেজ রাখতে লবণের গুরুত্ব অনেক । কারণ লবণ ব্যবহারের
কারণে আপনার ত্বকের যে সকল মরা কোষ রয়েছে সেগুলো সুস্থ হবে এবং ত্বক কোমল রাখতে
সাহায্য করবে ।
শরীরে যেকোনো ব্যথা দূর করতে আপনি লবণ ব্যবহার করতে পারেন । শরীরের যে অংশে
ব্যথা অনুভব হয়, সেখানে আপনি গরম পানির সাথে সামান্য পরিমাণ লবণ দিতে
পারেন । গরম পানি এবং লবণ যে জায়গায় ব্যথা অনুভব করবেন সেখানে ভালোভাবে
লাগিয়ে নিতে হবে । এতে করে আপনি খুব দ্রুত ব্যথা থেকে আরাম পাবেন
।
লবণের অপকারিতা
সব সময় আমাদের উচিত শরীরকে হাইড্রেট রাখা । কিন্তু যদি খাবারের সাথে অথবা
খাবার পথে কাচা লবণ খারাপ অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে এতে করে আপনার শরীরে
ডিহাইড্রেশন গড়ে উঠবে । কারণ খাবারের পাতে কাচা লবণ খুবই ক্ষতিকর
। এজন্য এ অভ্যাসটি বাদ দিতে হবে এবং শরীর সুস্থ সবল রাখতে হবে ।
অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়ার কারণে শরীরের রক্তচাপ বেড়ে যায় । রক্তচাপ
বেড়ে যাওয়ার কারণে যারা ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত তারা ঝুঁকির মুখে
সম্মুখীন হয়ে পড়বে । এজন্য উচিত মাত্রাতিরিক্ত লবণ না খাওয়া । নিয়ম
অনুযায়ী লবণ খেতে হবে এবং খাবারের পাতে কাচা লবণ খাওয়া অভ্যাস বাদ দিতে হবে
।
হাড়ের ক্ষতি করতে পারে লবণ । যদি লবণের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যায় তাহলে তা কমিয়ে দিতে হবে । তা না হলে এই লবণ আপনার হাড়ের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে । অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে । এজন্য উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া ।
আশা করি লবণ খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । যদি সুস্থ এবং রোগমুক্ত থাকতে চান তাহলে নিয়ম মেনে লবন ব্যবহার করুন । তা না হলে পড়তে পারেন খুব শীঘ্রই ঝুঁকের মুখে । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।
কাঁচা লবণ খাওয়ার নিয়ম
সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে চাইলে মেনে চলতে হবে সমস্ত নিয়ম কানুন । চারিদিকে
খেয়াল রাখতে হবে, এবং শরীরের প্রতি যত্নবান হতে হবে । এক্ষেত্রে
খাবারের সঙ্গে লবণের ব্যবহারটাও মেনে চলতে হবে । খাবার সময় পরিমাণ মতো লবণ
ব্যবহার করা উচিত । কারণ অতিরিক্ত লবণ দেহের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে
।
কাঁচা লবণ খাওয়ার নিয়ম রয়েছে । আমরা অনেকে দেখি যে খাবারের পাতে
কাচা লবণ খেয়ে থাকে । অনেকে এটাকে অভ্যাসে পরিণত করেছে । তবে এ
অভ্যাসটা মোটেও শরীরের পক্ষে উপকারী নয় । এতে করে শরীরের উপকার হওয়ার
চাইতে অপকার হয় বেশি । এজন্য উচিত পরিমাণ মতো লবণ খাওয়া । কাঁচা লবন
খাওয়ার নিয়ম রয়েছে । সে নিয়ম গুলো আপনি এখান থেকে জানতে পারবেন
।
প্রতিদিন লবণ খাওয়ার তালিকা
-
যাদের বয়স ১১ বছরের ঊর্ধ্বে তারা প্রতিদিন ৬ গ্রাম লবণ খেতে পারবেন
।
-
যাদের বয়স ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে তাদের উচিত নিয়মিত পাঁচ গ্রাম করে লবণ
খাওয়া ।
-
৪ থেকে ৬ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ৩ গ্রাম করে লবণ খাওয়ানো উচিত
।
-
এবং যে সকল বাচ্চাদের বয়স এক থেকে তিন বছর তাদের প্রতি দিন দুই গ্রাম করে
লবণ খাওয়াবেন ।
ভাজা লবণ খেলে কি হয়
সুস্থ মানুষ যাদের বয়স ১০ বছর কিংবা ১০ বছরের উর্ধ্বে তারা চাইলে নিয়মিত পাঁচ
থেকে ছয় গ্রাম লবণ খেতে পারবেন । কারণ সুস্থ থাকতে হলে যে কোন নিয়ম মেনে
চলতে হবে । এজন্য উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া । অতিরিক্ত পরিমাণে
লবণ খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি
সৃষ্টি হয় ।
একজন মানুষের প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম প্রয়োজন হয় । যা
৫ থেকে ৬ গ্রাম লবণের মধ্যে পাওয়া যায় । তাহলে বুঝতে পারছেন প্রতিদিন কি
পরিমান লবণ আপনি খেতে পারবেন । তবে এর চেয়ে বেশি লবণ খাওয়া কিন্তু একদমই
উচিত নয় । আমরা মনে করি লবণ ভাজলে হয়তো লবণের যে পুষ্টি বা গুনাগুন
রয়েছে তা হয়তো সঠিক মাত্রায় থাকে না ।
এ কথাটি মোটেও ঠিক নয় । কারণ লবণ ভাজলেও তার মধ্যে পরিমাণ মতো সোডিয়াম
রয়ে যায় । যা খাবার ফলে আমাদের শরীরে উপকারে আসে । যেমনটা কাঁচা লবণ
খেলে উপকার পাওয়া যায় ঠিক তেমনি ভাজা লবণের ক্ষেত্রেও একই রকম । আপনি
চাইলে লবণ ভেজে খেতে পারেন ।
আশা করি লবণ খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জানতে পেরেছেন । যাদের কাঁচা লবণ
খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তারা খুব দ্রুত এ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসুন । কারণ
কাঁচা লবণ যেমনটা উপকারে ঠিক তেমনি ক্ষতিকর ও বটে ।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক গন এ আর্টিকেলটিতে বিট লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লবণের
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । আশা করি আর্টিকেলটি
পড়ে বিট লবণ এবং সাধারণ লবণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন
। আমাদের সকলের উচিত পরিমাণ মতো করা । হোক সেটা কোন কাজ অথবা খাওয়া
।
পরিমাণ মতো বিট লবণ বা লবণ খেলে এর উপকারিতা পাওয়া যাবে । তবে এটা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে যায় তাহলে এর অপকারিতার আশঙ্কা রয়েছে বেশি । আশা করি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন ।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন
। এবং লবণের ভালো দিক এবং খারাপ দিক সম্পর্কে অন্যদের জানতে সাহায্য করবেন
। আশা করি ভালো থাকবেন এবং নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে বা জানতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url