ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো ডাবের পানি সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন জায়গায়
খোঁজাখুঁজি করছেন । কিন্তু সঠিক তথ্য কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না । তাহলে আপনি
এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন । এই আর্টিকেলে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ।এছাড়াও ডাবের পানি খাওয়ার
নিয়ম স্টেপ বাই স্টেপ জানিয়ে দিয়েছি এ আর্টিকেলের মাধ্যমে
।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগবে । এছাড়াও ডাবের পানি সম্পর্কে আরো বিভিন্ন তথ্য সমূহ জানতে পারবেন এই আর্টিকেলটি পড়ে ।
পোস্ট সূচীপত্র ঃ এই পোস্টের যে অংশ পড়তে চান সেখানে ক্লিক করুন ।
- ভূমিকা
- ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
- ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
- খালি পেটে ডাব খেলে কি হয়
- ভরা পেটে ডাব খেলে কি হয়
- ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়
- গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
- পরিশেষে
ভূমিকা
এই পুরো আর্টিকেলটিতে ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডাবের পানি
খাওয়ার নিয়ম ছাড়াও ডাবের পানি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন
। এ আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন খালি পেটে ডাব খেলে কি
হয়, ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়, গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার
উপকারিতা এবং প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় ।
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাবের পানি আমরা উপকারী হিসেবে জেনে থাকি । কারণ আমরা বাঙালিরা বিনা
কারণে কোন কাজই করি না । অযথা কোন কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি
না । ঠিক ডাবের পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে থাকে । আমরা ডাবের
পানি খেয়ে থাকি অসুস্থ হয়ে পড়লে, ডায়রিয়া হলে, শরীরে পানি
শূন্যতা দেখা দিলে একটা বিভিন্ন কারণে আমরা ডাবের পানি খেয়ে থাকি
।
তবে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় ডাবের পানিতে
। তবে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে প্রত্যেকটি জিনিসের ভালো এবং খারাপ
দুটি দিক রয়েছে । কোন জিনিসকে যদি ভালো কাজে লাগানো হয় তাহলে তার ফল ফল
ভালো পাওয়া যাবে । এবং যদি অতিরিক্ত মাত্রায় সে কাজটি আবার করা
হয় তাহলে তার খারাপ ফল পাওয়া যায় ।
আরও পড়ুন ঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
আমি ডাবের কথাই বলছি । ডাব একটি উপকারী খাবার তা আমরা সকলেই জানি । তবে
ডাব একটি অপকারী খাবার ও বটে । তো চলুন ডাবের উপকারিতা এবং অপকারিতা
সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক ।
ডাবের উপকারিতা
-
ক্যালসিয়াম মিশ্রিত একটি উপাদান হলো ডাবের পানি । ডাবের পানিতে রয়েছে
পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম । যা প্রাকৃতের মাধ্যমে শরীরে
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে ।
-
দেহের বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে ডাবের পানি ।
-
শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া সঠিক রাখতে ডাবের ভেতরের পাতলা আশ
জাতীয় খাবারটি বেশ উপকারী । যা একসময় পরিপক্ক হয়
নারকেলে পরিণত হয় ।
-
ডাবের পানিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম । যা
কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং কিডনির কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
।
-
আমাদের অনেকের শরীরে অনেক সময় পানির শূন্যতা দেখতে পাওয়া যায় । ডাবের
পানি নিয়মিত খেলে শরীরের এই পানি শূন্যতা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে
।
-
ডাবের পানিতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় এটি
দেহের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
-
তক উজ্জ্বল ও কোমল রাখতে নিয়মিত ডাবের পানি খেতে পারেন । কারণ
ডাবের পানিতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা ত্বক সুন্দর
রাখতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
-
আমরা অনেক সময় কাজ-কাম করে হাপিয়ে যাই । সে সময় যদি ডাবের পানি
খাওয়া যায় তাহলে শরীরের ক্লান্তি এবং পানি শূন্যতা দূর হয়ে
যাবে ।
- ডাবের পানি খাওয়ার ফলে প্রসাবের সমস্যার থেকে সমাধান পাওয়া যায় ।
- আশা করি ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । তবে এ সকল উপকারিতা গুলো পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ডাবের পানি খেতে হবে ।
-
আমাদের সকলের একটি সাধারণ ধারণা থাকা উচিত যে প্রতিটি জিনিসেরই ভালো এবং
খারাপ দুটি দিক থাকে । ঠিক ডাবের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ।
-
ডাবের পানি একটি উপকারী খাবার, ঠিক আছে । তবে তা
মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে উপকারের পরিবর্তে অপকার ঘটবে বেশি
।
-
ডাবের পানিতে থাকে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও
সোডিয়াম । যা দেহের বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় প্রদান করে এবং
শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । তবে যদি এই উপাদান গুলোর মাত্রা বেশি
হয়ে যায় তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে হবে
। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।
-
অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে ।
-
যে সকল মানুষ এলার্জিতে আক্রান্ত তাদের জন্য উচিত ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী ডাবের পানি পান করা । কারণ ডাবের পানি খাওয়ার
ফলে এলার্জি বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্য ঝোঁকির মধ্যে পড়তে পারে
।
-
ঠান্ডার সময় কিংবা যাদের সর্দি কাশি রয়েছে তাদের
পক্ষে ডাবের পানি বেশি খাওয়া উচিত নয় । এতে করে সর্দি
কাশি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে ।
-
এ সকল সমস্যা আপনি ফেস করতে পারবেন, যদি আপনি অতিরিক্ত মাত্রায়
ডাবের পানি পান করেন । আশা করি এ সকল তথ্য জানার পর অবশ্যই নিয়ম
অনুযায়ী ডাবের পানি পান করবেন ।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
খালি পেটে ডাব খেলে কি হয়
ভরা পেটে ডাব খেলে কি হয়
ডাব যেহেতু উপকারি খাবার সেহেতু আমাদের ডাব খাওয়া উচিত । তবে তার
নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে । কারণ মাত্রাতিরিক্ত খেলে উপকারের
পরিবর্তে বিপদ ঘটতে পারে । এজন্য অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ডাবের পানি
খাওয়া উচিত । এখন কথা হল ভরা পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয় । আমরা
ইতোমধ্যে জানলাম যে ডাবের পানি খালি পেটে খেলে কি হয় সে সম্পর্কে
।
আরও পড়ুন ঃ বিট লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা
যদি কেউ ভরা পেটে ডাবের পানি খান তাহলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না । কিন্তু
খাবারের পরপরই পানি খাওয়া ঠিক না । খাবারের কিছুক্ষণ
পর অথবা ক্লান্তি অনুভব করলে আপনি ডাবের পানি খেতে পারেন
। যাতে করে আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং কাজ কামে মনোযোগ
দিতে পারবেন ।
ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়
ডাব একটি স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী ফল । ডাবের পানিতে রয়েছে বিভিন্ন
ধরনের পুষ্টিকর উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা
মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায় যেখানে খাবার সংরক্ষণ
করা ছাড়া উপায় থাকে না । তো এমন অবস্থায় সংরক্ষণ করার পদ্ধতি যদি জানা না
থাকে তাহলে তা সংরক্ষণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে ।
এখন আসল কথা হল ডাবের পানি কিভাবে সংরক্ষণ করবেন ? ডাবের পানি সংরক্ষণ করার
বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে । আপনি চাইলে যে কোন মাধ্যমে ডাবের পানি সংরক্ষণ করতে
পারবেন । তো চলুন সংরক্ষণ পদ্ধতি গুলো কি কি তা বিস্তারিত জেনে নিই
।
প্রক্রিয়া জাত
প্রথমে একটি ডাব কে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে । এরপর ডাব
টি কেটে ডাবের পানি বের করে তা একটি পরিষ্কার মসৃণ কাপড়ে কিংবা
পরীক্ষার ছাত্রীদের থেকে নিতে হবে । ডাবের পানি সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে
খেয়াল রাখতে হবে ৯৫ থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে রাখতে হবে
। তা না হলে এর পুষ্টিকর উপাদানের ব্যাঘাত করতে পারে ।
বোতলে ডাবের পানি সংরক্ষণ
প্রথমে একটি বোতল পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিতে হবে । তবে বোতলটি হতে হবে
কাচের বোতল ।তাহলে সেখানে পানি সংরক্ষণ ভালো হবে । এরপর গরম
অবস্থায় ডাবের পানি সে বোতলে ভরে নিতে হবে । সম্পূর্ণ বোতলে ভরা হয়ে গেলে
বোতলের মুখ ভালো করে বন্ধ করে নিন । এবার সে বোতলগুলো ঠান্ডা জায়গায়
সংরক্ষণ করুন ।
ফ্রিজে সংরক্ষণ
আপনি চাইলে ফ্রিজে ডাবের পানি রেখে সংরক্ষণ করতে পারবেন । ডাব কেটে সে ডাবের পানি একটি পাত্রে নিয়ে সে পাত্রটি ফ্রিজে রেখে দিতে হবে । তাহলে পানিটা ঠান্ডা থাকবে এবং সুরক্ষিত থাকবে ।এছাড়াও আপনি চাইলে ডাবের পানির বরফ তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারবেন ।
টিপস
আপনি যখন ডাবের পানি সংরক্ষণ করবেন তখন তা যদি কাঁচের গ্লাসে সংরক্ষণ
করেন তাহলে সব থেকে ভালো হবে । খেয়াল রাখতে হবে বোতলগুলো যাতে রোদে না
থাকে । সব সময় ডাবের পানি ভর্তি বোতল ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে
। এবং যখন বোতল থেকে ডাবের পানি পান করবেন তখন ভালোভাবে বোতলের মুখ
খুলে পান করবেন ।
আরও পড়ুন ঃ প্রতিদিন কয়টি করে খেজুর খাওয়া উচিত
এবং পান করা হলে আবার পুনরায় ভালোভাবে বোতলের মুখ বন্ধ করে রাখবেন
। কারণ বোতলের মুখ খোলা থাকলে কিংবা ঢেলাঢালা
থাকলে সেখানে গ্যাস তৈরি হতে পারে । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ডাবের
পানি কিভাবে সংরক্ষণ করবেন ।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
একজন গর্ভবতী মহিলার নিজেকে সুস্থ রাখার যতটা প্রয়োজন । ঠিক ততটাই প্রয়োজন
তার গর্ভে সন্তানকে সুস্থ রাখা । গর্ভবতী মহিলাদের খাবার ের সময়সূচিটা
বিশেষ করে ঠিক রাখতে হয় । কারণ একজন গর্ভবতী নারীর দেহে পর্যাপ্ত
পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন । এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের ডায়েটের দিকটা
বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হয় । এই জন্য অন্যতম একটি উপাদান হলো ডাবের পানি
।
ডাবের পানিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্লোরাইড
। যা শরীরে প্রবেশ করার পর শরীরে ইলেকট্রলাইট তরল পদার্থ উৎপন্ন করে
। একজন গর্ভবতী মহিলাকে তিন মাস থেকে ডাবের পানি খাওয়ানো উচিত
। কারণ এ সময় তার পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে অনেক বেশি । এবং
বাচ্চার বৃদ্ধিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে
।
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে যে সকল উপকারিতা গুলো
পাওয়া যায় সেগুলো হলো ঃ
-
গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখতে এবং সন্তানের মস্তিষ্কে ভালো রাখতে একজন
গর্ভবতী নারীর ডাবের পানি খাওয়া উচিত । এতে করে মা ও সন্তান উভয়েই ভালো
থাকবে ।
-
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে ডাবের পানি । এজন্য একজন গর্ভবতী নারীর
নিয়মিত গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী
-
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় মায়ের অনেক রক্তের প্রয়োজন
হয় , আরে প্রয়োজন মেটায় ডাবের পানি । কারণ ডাবের পানি শরীরে
রক্ত বৃদ্ধি করে ।
- গর্ভবতী নারীদের একটি সমস্যা বেশি দেখা যায় সেটা হল বুকে জ্বালাপোড়া করা । আর বুকের এই জ্বালা পোড়া দূর করতে ডাবের পানি খাওয়া উচিত ।
পরিশেষে
ডাব একটি উপকারী ফল । ডাবের পানির উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে
আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন । এবং ডাবের পানি
খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ও আশা করি জানতে পেরেছেন । আপনারা যদি ডাবের
পানির উপকারিতা লাভ করতে চান তাহলে আর্টিকেলে বর্ণনা অনুযায়ী
ডাবের পানি খাবেন । আশা করি উপকৃত হবেন ।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের কাছে শেয়ার করবেন । এবং বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইটটি ফলো করে দিন । আশা করি ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url