শিশুর পুষ্টি হীনতা দূর করার উপায় বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা , আপনি হয়তো শিশুর পুষ্টিহীনতা নিয়ে দুশ্চিন্তা
আছেন এবং এর সমাধান খুঁজছেন । তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছেন
। এই আর্টিকেলে শিশুর পুষ্টিহীনতা দূর করার উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । এবং শিশুর পুষ্টিহীনতা নিয়ে আরো অনেক
সমস্যার সমাধান এই আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে ।
আপনি যদি চান যে শিশুর পুষ্টিহীনতা দূর করবেন তাহলে এ আর্টিকেলটি থেকে উপায় গুলো জেনে নিন । এবং সে অনুযায়ী কাজ করলে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন আশা করি ।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ এই পোস্টের বিভিন্ন অংশ পড়তে নিচে ক্লিক করুন ।
- শিশুর পুস্টিহিনতা দূর করার উপায়
- পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে করণীয়
- বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
- জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
- শিশুদের অপুষ্টি জনিত রোগের নাম
- বাচ্চাদের স্বাস্থ্য ভালো করার উপায়
- শেষ কথা
শিশুর পুস্টিহিনতা দূর করার উপায়
প্রতিটি শিশুর বৃদ্ধি , বুদ্ধির বিকাশ , শারীরিক গঠন এবং সুস্থতার
জন্য প্রয়োজন সঠিক মাত্রায় সঠিক পুষ্টি উপাদান । তবে
বর্তমানে প্রচুর ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা
অপুষ্টিহীনতায় ভুগছে। অপুষ্টির কারণে শিশুর ওজন কম থাকে
, শিশুর বৃদ্ধি তে বাধা সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ রোগ ব্যাধির
সংক্রমণে পড়তে হয় ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়
যে, বাংলাদেশের ৪৮ ভাগ শিশু অপুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত ।এবং
বাংলাদেশের উপর একটি মার্কিন গবেষণা চালিয়ে জানা যায় যে বাংলাদেশের অধিকাংশ
শিশুর অসুস্থতা এবং বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো অপুষ্টি
। শিশুর শরীরে যে পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন তা যদি পরিমাণ মতো না
পাই তাহলে শিশু নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।
এজন্য আমাদের একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে , আমাদের
শিশু যাতে সুস্থ থাকে এবং সব সময় শিশুর বৃদ্ধি, শারীরিক গঠন
এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে
। এবং শিশুর প্রতি সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে খাবারের কোন প্রকার ব্যাঘাত
না ঘটে এবং যখন শিশুকে খাওয়ানো হয় তখন যাতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যায়
।
আরও পড়ুন ঃ প্রতিদিন কয়টি করে খেজুর খাওয়া উচিত
বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আরো জানা যায় যে, সারা বিশ্বের
১৫ কোটি শিশু এ অপুষ্টিতে আক্রান্ত । তবে বর্তমান সময়ে শিশুর
পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে । যেসকল কারণে
প্রতিনিয়ত শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং পুষ্টিহীনতায় ভুগছে সে
সকল কারণগুলো হলো ঃ
-
শিশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব । বিশেষ করে সুষম খাদ্যের
অভাবে শিশু পোস্টেহীনতায় ভোগে ।
-
পিতা-মাতার গুরুত্ব হীনতার কারণে এবং অসচেতনতার কারণে শিশু
পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে ।
-
শিশুর অসুস্থতা এবং ক্রম বিকাশে বাধা প্রদানের আরো একটি কারণ হলো
দারিদ্রতা এবং পরিবারের সুশিক্ষার অভাব ।
-
শিশুর শরীরে মাত্রা সমপরিমাণ ভিটামিনের কারণে শিশু অসুস্থতায় ভুগতে থাকে
। যখন শিশুকে খাওয়ানো হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে পুষ্টিকর এবং
ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়ানোর ।
-
অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে শিশু পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত
হয়ে পড়ে ।
-
বাল্যবিবাহের কারণে শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার হয় ।
পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে করণীয়
প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি শিশুর এই পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য আমাদের
কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে । এবং পরিবারের প্রতিটি শিশুর
প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে শিশুরা অপুষ্টিকর কোন খাবার না
খায় এবং অস্বাস্থ্যকর কোন কাজকর্ম করে বসে । যেসব নিয়ম-কানুন মেনে চললে
শিশুর পুষ্টিহীনতা দূর করা সম্ভব সে সকল নিয়ম-কানুন গুলো হলো ঃ
-
পরিবারের প্রতিটি সদস্য বিশেষ করে পিতা এবং মাতাকে সচেতন হতে হবে ।
-
প্রতিটি বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যগত এবং পুষ্টিগত জ্ঞান অর্জন করতে হবে
।
-
শিশু জন্মের পর অন্ততপক্ষে পাঁচ মাস মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে
।
-
শিশুকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় টিকা সময় মত
দিতে হবে ।
-
শিশু যখন খাবার খেতে শিখবে তখন থেকে শিশুকে শাক-সবজি এবং ভিটামিন জাতীয় খাবার
দিতে হবে । বিশেষ করে শিশুকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে ।
-
বাচ্চাকে সব সময় ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে । ভেজাল যুক্ত খাবার
খাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে । এজন্য ভেজাল
যুক্ত খাবার পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি ।
-
দেশে বাল্যবিবাহ দূর করতে হবে । কারণ অপর্যাপ্ত বয়সে ছেলে
মেয়ের বিয়ে হওয়ার কারণে শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে ।
-
পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং শিশুর প্রতি যত্নশীল হতে হবে
।
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
শিশুর অপুষ্টির কারণে একটি বিষয় বিশেষ করে লক্ষ্য করা যায় সেটি হল শিশুর বয়স অনুযায়ী ওজন সঠিক থাকে না । মূলত এ কারণটি হয়ে থাকে সঠিক পুষ্টির অভাবে । চলুন যেন নেওয়াযাক বয়স অনুযায়ী ছেলে ও মেয়ের ওজন কতটুকু হওয়া উচিত ঃ
ছেলেদের ক্ষেত্রে
বয়স ছেলেদের
৬ মাস ৭.৮ কেজি
১ বছর ১০.২ কেজি
২ বছর ১২.৩ কেজি
৩ বছর ১৪.৬ কেজি
৪ বছর ১৬.৭ কেজি
৫ বছর ১৮.৭ কেজি
৬ বছর ২০.৬৯ কেজি
৭ বছর ২২.১ কেজি
৮ বছর ২৫.৩ কেজি
৯ বছর ২৮ কেজি
১০ বছর ৩২ কেজি
১১ বছর ৩৬ কেজি
১২ বছর ৪৫ কেজি
আরও পড়ুন ঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মেয়েদের ক্ষেত্রে
বয়স ওজন
৬ মাস ৭.২ কেজি
১ বছর ৯.৫ কেজি
২ বছর ১১.৮ কেজি
৩ বছর ১৪.১ কেজি
৪ বছর ১৬ কেজি
৫ বছর ১৭.৭ কেজি
৬ বছর ১৯.৫ কেজি
৭ বছর ২১.৯ কেজি
৮ বছর ২৪.৮ কেজি
৯ বছর ২৬ কেজি
১০ বছর ৩২ কেজি
১১ বছর ৩৫ কেজি
১২ বছর ৪৪ কেজি
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
জন্মের সময় প্রতিটি শিশুর সঠিক ওজন নির্ধারণ করা হয় আড়াই কেজি
। তবে যদি কোন শিশুর ওজন আড়াই কেজির কম হয় তবে ধরে নেওয়া
হয় সেই শিশুটির ওজন নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম । এ সকল শিশুকে
বলা হয় লো বার্থ বেবি , অর্থাৎ কম ওজনের শিশু । শিশুর
এই ওজন পর্যাপ্ত পরিমাণের চেয়ে কম হওয়ার কারণ হলো মায়ের পুষ্টির
অভাব ।
গর্ভধারণের পর থেকে প্রতিটি মায়ের উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
। এতে করে গর্ভের সন্তান ভালো থাকে এবং সুস্থ থাকে । তবে
যদি বাচ্চার মা অযত্নশীল হয় এবং পুষ্টিকর খাবার না খায়
তাহলে শিশু অপুষ্টিকর হয় এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় না
। তাই গর্ভধারণের পর প্রতিটি মায়ের উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার এবং
নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া ।
চিকিৎসা
জন্মের পর বাচ্চার ওজন যদি কম হয় তাহলে সে বাচ্চাকে ডাক্তারের
আওতায় রাখতে হবে এবং শিশু বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে
। সঠিক পুষ্টির জন্য মায়ের দুধ দুধ পান করাতে হবে এবং তার
পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে । যদিও বাচ্চা জন্ম
নেওয়ার পর তেমন কিছু খেতে পারবে না এজন্য প্রয়োজনে নাকে নল
ব্যবহার করে খাবার দিতে হবে ।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী ঔষধ সেবন করাতে হবে এবং প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক
দিতে হবে । যদি বাচ্চার তাপমাত্রা কমে যায় তাহলে তাকে
ইনকিউবেটরে রাখতে হবে । তবে যদি কোন বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর তার
অবস্থা আশঙ্কাজনক হয় তাহলে সে বাচ্চাকে এনআইসিইউ তে রাখতে হবে
।
শিশুদের অপুষ্টি জনিত রোগের নাম
শিশুর পুষ্টিহীনতার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে । তার
মধ্যে বিশেষ কিছু রোগের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে । সে নাম গুলো
হল ঃ
- ম্যারাসমাস /হাড্ডি সার জনিত রোগ
- কোয়া সিওর কর / গা ফোলা
- রাতকানা রোগ
- মুখের কোনায় ঘা
- রিকেটস
- রক্তস্বল্পতা
ম্যারাসমাস /হাড্ডি সার জনিত রোগ
বাচ্চাদের স্বাস্থ্য ভালো করার উপায়
অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারণে বাচ্চারা প্রতিনিয়ত নানা রকম রোগের শিকার
হয়ে পড়ে । তাই বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সবসময়
বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত । বিশেষ করে সুষম খাদ্য বেশি
খাওয়ানো উচিত বাচ্চাদের । সুষম খাদ্যের অভাবে দেহের বিভিন্ন ধরনের
রোগের সৃষ্টি হয় ।
দিনে অন্ততপক্ষে ৫ বার তাজা এবং টাটকা ফল খাওয়ানো উচিত । এছাড়াও
বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, মাছ মাংস, ডিম, এবং পুষ্টিকর যে
সকল শাকসবজি বা খাবার রয়েছে সেগুলো বাচ্চাদের বেশি বেশি খাওয়াতে হবে
। এবং যে সকল খাদ্যে ভেজাল রয়েছে বা তৈলাক্ত খাবার ও ফাস্টফুড ফাস্টফুড পরিহার করতে
হবে ।
আরও পড়ুন ঃ ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন
সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে হলে অবশ্যই খাদ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে
। এর পাশাপাশি নিজেকে যত্নবান হওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা
থেকে সচেতন রাখতে হবে । তবে সম্ভব সুস্বাস্থ্য জীবন গড়ে তোলা
। আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে
বাচ্চাদের স্বাস্থ্যবান এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে গড়ে
তুলবেন ।
শেষ কথা
শিশুর পুষ্টিহীনতার অনেক কারণ রয়েছে । যা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে ।পুষ্টিহীনতার কারণে শিশুর বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে
। এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । তাই আমাদের
উচিত যে সকল কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় সে কারণগুলো বর্জন করা
। এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করা ।
আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে । আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন । "ধন্যবাদ "
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url