স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম বিস্তারিত দেখে নিন
বর্তমানে স্টুডেন্টদের জন্য খুব সুন্দর একটি মাধ্যম চালু করা হয়েছে । তা
হলো স্টুডেন্ট একাউন্ট ।এই স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার মাধ্যমে স্টুডেন্টরা এখন
বিভিন্নভাবে উপকার পেয়ে থাকে । আপনি যদি স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম না
জানেন তাহলে এ আর্টিকেলটি থেকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার সম্পূর্ণ নিয়ম জেনে নিতে
পারবেন ।
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে । তাহলে আপনি জানতে পারবেন স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ এই পোস্টের বিভিন্ন অংশ পড়তে নিচে ক্লিক করুন ।
- স্টুডেন্ট একাউন্ট কি
- স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
- বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
- স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
- স্টুডেন্ট একাউন্টের অসুবিধা
- লেখকের শেষ কথা
স্টুডেন্ট একাউন্ট কি
স্টুডেন্ট একাউন্ট হল স্টুডেন্টদের মধ্যে সঞ্চয়ী অভ্যাস গড়ে তোলার একটি মাধ্যম । বাংলাদেশে বিভিন্ন সেভিংস একাউন্ট রয়েছে । কিন্তু এই সেভিংস একাউন্ট গুলোর চেয়ে বিশেষ সুবিধা সম্মত ব্যাংকিং প্রডাক্ট । যা শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য করা হয়েছে । এই স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা থাকলে স্টুডেন্টরা তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে পারবে ।
আমরা সাধারণত যে সকল সঞ্চয় হিসাবগুলোতে যে সকল সুবিধা গুলো ভোগ করে
থাকে তার থেকে অধিকাংশ সুবিধা রয়েছে স্টুডেন্ট একাউন্টে । স্টুডেন্ট
একাউন্টের মাধ্যমে স্টুডেন্টরা বিশেষ ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হয়
। যেহেতু এটি একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট তাই স্টুডেন্টদের জন্য বিশেষ কিছু
সুবিধা থাকা আবশ্যক ।
এক কথায় বলতে গেলে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট হলো স্টুডেন্টদের জন্য সুন্দরভাবে এবং
বিশেষ কিছু-সুযোগ সুবিধার সমন্বয়ে তৈরি একটি অ্যাকাউন্ট । যেখান থেকে
স্টুডেন্টরা তাদের সাধ্যমত বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে পারবে এবং বিভিন্ন
ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারবে । স্টুডেন্ট একাউন্টের যে সকল সুবিধা গুলো
রয়েছে সেগুলো নিচে দেওয়া হয়েছে । আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন আশা করি সকল
সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতেও বুঝতে পারবেন ।
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
স্টুডেন্টদের সুবিধার্থে এবং স্টুডেন্টদের কে সঞ্চয় মুখে করে তুলতে এই
স্টুডেন্ট একাউন্ট মাধ্যমটি চালু করা হয়েছে । প্রতিটি স্টুডেন্ট তাদের নিজ
নিজ নামে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবে । এই স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের
মাধ্যমে স্টুডেন্টরা তাদের নিত্যনতুন প্রয়োজনীয় চাহিদা গুলো মেটাতে পারবে
।
স্টুডেন্টদের জন্য এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই উপকারী একটি মাধ্যম
। যা অন্যান্য সেভিংস ব্যাংকগুলোতে এ সকল সুযোগ সুবিধা গুলো দেওয়া হয়
না যে সকল সুযোগ সুবিধাগুলো স্টুডেন্ট একাউন্টে স্টুডেন্টরা ভোগ করতে পারে
। চলুন দেখে নিয়ে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
এবং স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ।
আরও পড়ুন ঃ কোন দেশে সহজে স্কলারশিপ পাওয়া যায় যেনে নিন
স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা দরকার ঃ
-
যেই প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডের
ফটোকপি ।
-
শিক্ষার্থীদের মার্কশিট এর ফটোকপি এবং ট্রান্সক্রিপ্ট এর ফটোকপি ।
-
শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন কার্ডের ফটোকপি । তবে যদি শিক্ষার্থীর জাতীয়
পরিচয় পত্র থাকে তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ।
-
এবং যদি জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে তাহলে অন্য কারো যাতে পরিচয়পত্র
দিয়ে অন্যজনের নামে একাউন্ট খুলতে পারবে । তবে এই অন্য ব্যক্তিটি
অবশ্যই শিক্ষার্থীর আপনজন হতে হবে ।
-
শিক্ষার্থীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
-
স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যাকে নমিনি করতে চান তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
-
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার সময় সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা জমা করতে
হবে একাউন্টে । এটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ।
-
তবে যদি স্টুডেন্ট একাউন্ট ইসলামী ব্যাংকে খুলতে চান তাহলে ১০০ টাকা জমা করতে
হবে ।
-
স্টুডেন্ট যে প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে সে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত
প্রণয়ন পত্র ।
বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা লাগবে ঃ
- স্টুডেন্টের বয়স অবশ্যই ১৪ এর বেশি ১৮ এর কম হতে হবে
- ডিজিটাল জন্ম সনদ থাকতে হবে
- মা-বাবার রানিং বিকাশ একাউন্ট থাকতে হবে
স্টুডেন্ট বিকাশ একাউন্ট খোলার ধাপসমূহ ঃ
- বিকাশ স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে সর্বপ্রথম গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে বিকাশ অ্যাপটি ডাউনলোড দিতে হবে ।
- এরপর অ্যাপস এ প্রবেশ করে লগইন/রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করতে হবে ।
- এবার সেখানে দেশ সিলেক্ট করতে বলবে ওখানে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে দেবেন ।
- এরপর যে নাম্বার দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চান সে নাম্বারটি দিতে হবে ।
- যে নাম্বার দিয়েছেন সে নাম্বারে ৬ ডিজিটের একটি কোড যাবে । সেই কোডটি পরবর্তী ধাপে প্রদান করে ভেরিফিকেশন করতে হবে ।
- যেহেতু স্টুডেন্টের জাতীয় পরিচয় পত্র নাই সেহেতু জন্ম সনদ বেছে নিন ।
- ডিজিটাল জন্ম সনদের ছবি তুলে আপলোড করে দিন ।
- জন্ম সনদ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিকভাবে দিয়েছেন কিনা তা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নিন ।
- ব্যক্তিগত কিছু তথ্য যেমন- লিঙ্গ, আয়ের উৎস, পেশা, মাসিক আয়, ইত্যাদি যে তথ্য চাইবে তা সঠিকভাবে দিতে হবে ।
- বিকাশ একাউন্ট খুলতে নমিনি হিসেবে মা এবং বাবাকে বেছে নিন । এবং তাদের সচল যে বিকাশ একাউন্টে রয়েছে সে বিকাশ নাম্বার দিয়ে দিন ।
- এবার সুন্দর ভাবে পরিষ্কার করে সামনের দিক থেকে নিজের ছবি তুলুন । ছবি তোলা হয়ে গেলে সাবমিট করুন ।
- শেষে মা বাবার বিকাশ নাম্বারে পাঠানো ভেরিফিকেশন কোডটি প্রদান করে সম্মতি নিশ্চিত করুন । এবং ৫ সংখ্যার বিকাশ পিন নাম্বার দিন ।
স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
স্টুডেন্ট একাউন্ট এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যেগুলো সাধারণ সেভিংস একাউন্ট থেকে
পাওয়া যায় না । শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য বাংলাদেশের সকল ব্যাংক এই
স্টুডেন্ট একাউন্টের পদ্ধতি টি চালু করেছে । এই স্টুডেন্ট একাউন্টের
মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে এবং তারা নিজেরা
সঞ্চয় মুখী হচ্ছে ।
নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীরা আরো এগিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশ
ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই একাউন্টে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত রাখা যাবে
। শিক্ষার্থীরা চাইলে দিনে ৫,০০০ টাকা এবং প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার
টাকা পর্যন্ত লেনদেন করতে পারবে । কিন্তু স্টুডেন্ট একাউন্টে সেন্ড
মানির মাধ্যমে টাকা পাওয়া গেলে ও ক্যাশ ইন বা অ্যাড মানি সেবা থাকছে না
।
স্টুডেন্ট একাউন্টের সুবিধা গুলো ঃ
- শিক্ষার্থীরা স্কুলের পরীক্ষার ফিস জমা দিতে পারবে ।
- নিত্য দৈনন্দিনের এর প্রয়োজন মেটাতে পারবে ।
- স্টুডেন্ট একাউন্ট থেকে শিক্ষার্থীরা মোবাইল রিচার্জ করতে পারবে ।
- চাইলে শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট একাউন্ট এর মাধ্যমে কাউকে টাকা পাঠানো এবং বিল পরিশোধ করতে পারবে ।
- যে সকল শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট একাউন্ট রয়েছে তারা কোন চার্জ ছাড়াই ফ্রিতে ব্যাংকিং করতে পারবে ।
- স্টুডেন্ট একাউন্টে বাৎসরিক কোন চার্জ বা ফি দেওয়া লাগে না ।
- শিক্ষার্থীরা এই একাউন্টের মাধ্যমে তাদের উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারবে ।
এ সকল সুবিধা গুলো শিক্ষার্থীরা পাবে স্টুডেন্ট একাউন্টে পক্ষ থেকে । তবে
যাদের স্টুডেন্ট একাউন্ট করা নেয় তারা চাইলে খুব দ্রুত স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলে
নিতে পারেন । এবং এ সকল সুযোগ সুবিধা গুলো উপভোগ করতে পারেন ।
স্টুডেন্ট একাউন্টের অসুবিধা
আর যদি এগুলো নিয়ম না মানেন তাহলে মনে হবে যে এগুলো স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের
অসুবিধা । তো চলুন স্টুডেন্ট একাউন্ট এর অসুবিধা গুলো জেনে নিই ঃ
- স্টুডেন্ট একাউন্ট থেকে যখন কেউ টাকা তুলবে তখন নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি টাকা তুলতে পারবেনা ।
- স্টুডেন্ট একাউন্টে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা রাখা যায় । এর বেশি স্টুডেন্ট একাউন্টে রাখা যায় না ।
- কিছু কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটিএম কার্ড বা চেক পাওয়া যায় না ।
- স্টুডেন্ট একাউন্টে নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ থাকবে । এই মেয়াদ নির্ভর করে শিক্ষার্থীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া আইডি কার্ডের মেয়াদ অনুযায়ী । এর পরবর্তীতে তা বাতিল হয়ে যায় ।
আশা করি বুঝতে পারলেন স্টুডেন্ট একাউন্টে অসুবিধা গুলো কি কি ।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন
। এবং এ আর্টিকেলটি থেকে জানতে পেরেছেন কিভাবে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে হয়
এবং এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে । আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন কিংবা
আপনার নিকটে যদি কোন শিক্ষার্থী থেকে থাকে তাহলে তাকে এ পরামর্শ দিয়ে উপকৃত
করতে পারেন ।
আশা করি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে । আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই
শেয়ার করবেন এবং যারা এই স্টুডেন্ট একাউন্টের ব্যাপারে ধারণা রাখেনা তাদেরকে
জানিয়ে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার উৎসাহিত করবেন । আশা করি ভালো থাকবেন
ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url