ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার গুলো যেনে নিন
প্রিয় বন্ধুরা আমরা অনেক সময় লক্ষ করি যে, আমাদের ঘন ঘন জ্বর হয় । কিন্তু আমরা এর কারণ সম্পর্কে জানিনা । এই আর্টিকেলটি পড়লে ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন । এ আর্টিকেলে খুব সুন্দর ভাবে ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকারগুলো দেওয়া হয়েছে ।
চিকিৎসকদের পরামর্শে জানা গেছে কিছু কিছু সময় জ্বর মারাত্মক প্রাণঘাতি হয়ে ওঠে । এবং জ্বরের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে ।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান সেখানে ক্লিক করুন ।
- জ্বর কি
- ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- ঘন ঘন জ্বরের প্রতিকার
- ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ
- ঘন ঘন জ্বর আসার কারণ কি
- জ্বর নির্ণয় করার উপায়
- কোন ভিটামিনের অভাবে ঘন ঘন জ্বর হয়
- লেখকের মন্তব্য
জ্বর কি ?
আমাদের শরীরে যখন তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছায় তখন আমরা
সেটাকে জ্বর বলে থাকি । চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী জ্বর আসলে কোন রোগ
নয়, বরং এটি রোগের একটি উপসর্গ ।এজন্য জ্বরকে শরীরের কোন রোগের সতর্কবার্তা
বলা যায় । যার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে এবং জ্বরের বিভিন্ন কারণ হয়ে থাকে
।
কোন কোন সময় দেখা যায় হালকা জ্বর হয় আবার কোন কোন সময় দেখা যায় তীব্র জ্বর
হয় । আবার অনেকের দেখা যায় ঘন ঘন জ্বর হতে থাকে । এ ঘন ঘন জ্বর
হওয়ার কারণ কি এবং এর থেকে মুক্তির উপায় কি সে সম্পর্কের নিচে সুন্দরভাবে
দেওয়া হয়েছে । নিচের অংশ পড়লে এর কারণ ও প্রতিকার জানতে পারবেন
।
ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
ঘন ঘন জ্বর হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে । অনেক সময় দেখা যায় ঠান্ডা জনিত
কারণে ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে । এবং ঠান্ডা লাগার কারণে সর্দি, কাশি
প্রায় সব সময় এগুলো হয়ে থাকে । আবার অনেক সময় দেখা যায় যে জ্বর হওয়ার
পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ওষুধ সেবন করি । কিন্তু সেই ওষুধের
সম্পূর্ণ ডুজ আমরা পূরণ করি না ।
যার হালকা ভালো হয়ে গেলেই আমরা ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেই ফলে জ্বর
সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় না ।পুরোপুরি ভাবে জ্বর ভালো না হওয়ার কারণে পুনরায় আবার
জ্বর আসে । এবং এই জ্বর কিছুদিন পর পর হয়ে থাকে । আবার দেখা যায় যে
যে সকল মানুষ যক্ষা রোগী বা যক্ষা রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি
বেশি লক্ষ্য করা যায় ।
আরও পড়ুন ঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে ১৩ খাদ্য - ক্যান্সার প্রতিরোধক সবজি
জ্বর হওয়ার পর অন্যান্য কোন রোগের ইঙ্গিত এর কথা চিন্তা করা যায়
। যেমন- কালা জ্বর, লেম্ফোমা্, ম্যালেরিয়া, যক্ষা
এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ফোড়া ও ফুসফুসে ফোঁড়া, লিভারে ফোঁড়া সহ ফুসফুস
লিভার এবং কিডনি ক্যান্সারের কারণেও অল্প অল্প জ্বর হয়ে থাকে । যে সকল
মানুষ এই রোগ গুলোতে আক্রান্ত তাদের বেশিরভাগ ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে ।
আবার আমরা যখন ঘুমাই কিংবা অনেক সময় ঘেমে যায় তখন সে ঘাম আমাদের
শরীরেই শুকিয়ে যায় । এ ঘাম শরীরে বসে যাওয়ার কারণে ঘন ঘন জ্বর এবং
হালকা কাশি হয়ে থাকে । এবং প্রায় মাঝে মাঝেই সর্দি লেগে থাকে
। উপরোক্ত এই সকল কারণে ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে ।
ঘন ঘন জ্বরের প্রতিকার
ঘন ঘন জ্বর হলে অবশ্যই এর প্রতিকার আমাদের জানতে হবে । এর থেকে আমাদের
মুক্তি পেতে হবে ।ঘন ঘন জ্বরের প্রতিকারে বেশ কিছু ঘরোয়া টিপস অবলম্বন করতে
পারেন । অথবা নিকটবর্তী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে পারেন
। তবে এ সমস্যার সমাধান আপনারা চাইলে ঘরে বসেই করতে পারেন
। ঘরোয়া উপায় গুলো হলো ঃ
জলপটি ঃ যদি কারো ঘন ঘন জ্বর আসে তাহলে সে মাথায় জল প্রতি দিতে
পারে । কারণ শরীরের তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন জলপটি দেওয়ার
মাধ্যমে সে তাপমাত্রা কমানো সম্ভব। তাই যাদের ঘন ঘন জ্বর আসে তারা
জলপোটি দ্বারা শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে পারবেন । যাদের ঘন ঘন জ্বর
আসে তারা এই অবলম্বন করবেন ।
বিশ্রামঃ আমরা অনেককে দেখি যখন জ্বর হয় তখন এদিক সেদিক ছোটাছুটি কিংবা ঘুরে বেড়াই ।কিন্তু এই সময় বিশ্রাম নেয়া জরুরী । কারণ জ্বরের সময় বিশ্রাম নিলে শরীর স্থির থাকবে এবং শরীরের শক্তি কমবে না । বিশেষ করে এই উপায়টি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য । কারণ শিশুরা জ্বর হওয়ার পরও এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে ।
গোসলঃ আমাদের যখন জ্বর হয় তখন আমরা গোসল করতে ভয় পায় কারণ আমাদের
ঠান্ডা লাগে ।কিন্তু ঠান্ডা পানিতে গোসল করা আমাদের শরীরের জন্য ভালো । তবে
কেউ যদি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে না পারে তাহলে পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর
ভালোভাবে মুছে নিতে হবে ।আর যদি সম্ভব হয় গোসল করা তাহলে গোসল করে নিতে হবে
।
খাবারঃ জ্বর হলে কমলার জুস এবং ভিটামিন সি জাতীয় যে সকল খাবার বা ফলমূল রয়েছে সেগুলো খেতে হবে । কারণ জ্বরের সময় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল বা ফলের রস খুবই কার্যকরী । এই ভিটামিন সি এর কারণে শরীরের ইউনিয়ন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে । এ সকল উপায়গুলো অবলম্বন করলে খুব দ্রুত জ্বর কমানো সম্ভব ।
যাদের ঘন ঘন জ্বর আসে তারা এই উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারেন । খুব দ্রুত এবং
খুব সহজে বাড়িতে বসেই জ্বর কমাতে পারবেন । তবে জ্বরের মাত্রা যদি অতিরিক্ত
হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে । এবং অতিরিক্ত
জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না ।
ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ
এই শরীরের পানি বের হয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক সময় যার আসতে পারে । তবে পানি
শূন্যতার কারণে যেই সমস্যাটি সবথেকে বেশি হয়ে থাকে সেটি হল কিডনির সমস্যা ।
কিডনির যাবতীয় অসুখের সূত্রপাত ঘটে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির অভাবে
। পানি পানি করার কারণে কিডনিতে পাথর জমতে পারে এবং এর থেকে তীব্র
যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে ।
এছাড়াও ঘন ঘন জ্বর হওয়ার ফলে তলপেটে যন্ত্রণা হতে পারে । তলপেটে ব্যথা হলে
বুঝতে হবে এটি কিডনিজনিত একটি সমস্যা । কিংবা কিডনিতে পাথর জমার ইঙ্গিত
। তাই যত দ্রুত সম্ভব এর থেকে সমাধান নিতে হবে এবং দীর্ঘদিন যদি তলপেটে
ব্যথা থাকে তাহলে অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে ।ছোটখাটো সমস্যা বলে এড়িয়ে যাওয়া
চলবে না । কারণ ছোট সমস্যা থেকেই বড় সমস্যা হতে পারে ।
আবার অনেক সময় ঘন ঘন জ্বর অ্যালকোহল উইথড্রয়াল্ ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু সহ আরো
অনেক রোগের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে । তাই শরীরের তাপমাত্রা যদি ক্রমাগত বাড়তে
থাকে তাহলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেতা হবে । এবং যে সকল কারণে
ঘন ঘন জ্বর আসে সে সকল কারণ বর্জন করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে ।
ঘন ঘন জ্বর আসার কারণ কি
জ্বর হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে । সাধারণত
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এছাড়াও বিভিন্ন পরজীবী সংক্রমণের কারণে জ্বর
হয়ে থাকে । আবার অনেক সময় দেখা যায় ঘন ঘন সর্দি হয়ে থাকে । এই
সর্দি ভারাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে । আর এই ঘন ঘন
সর্দি বা ভারাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ধীরে ধীরে জরে আক্রান্ত করতে পারে
।
আরও পড়ুন ঃ স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় - স্কিন এলার্জির লক্ষণ সমুহ
- দেহের প্রোটোজোয়াল কিংবা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অথবা ছত্রাকের কারণে শরীরে অসুস্থতা বোধ হতে পারে ।
- অনেকে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার থাকতে পারে । এই ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্সি এর কারণেও জ্বর আসতে পারে ।
- টিকা, শরীর ব্যথা্, ফোড়া কিংবা টিউমারের কারণে জ্বর হয়ে থাকে ।
- করোনাভাইরাস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি হল জ্বরের প্রথম লক্ষণ । অর্থাৎ জ্বর হলো এ সকল রোগের প্রধান লক্ষণ । জ্বর হওয়ার পরবর্তীতে এ সকল রোগগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে ।
জ্বর নির্ণয় করার উপায়
জ্বর নির্ণয় করার খুব সহজ একটি মাধ্যম হিসেবে আমরা থার্মোমিটার চিনি । যার
নির্ণয়ের কথা উঠলে সর্বপ্রথম আমাদের থার্মোমিটারের কথা স্মরণ হয় । কারণ
থার্মোমিটার দ্বারা শরীরের তাপমাত্রা সনাক্ত করা হয় । থার্মোমিটারে পারদ এর
দাগ যদি স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন আমরা ধরেনি যে আমাদের জ্বর হয়েছে
।
এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপের দ্বারা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে
। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জানা যায় যে জ্বর কোন রোগ নয় বরং জ্বর
হলো অন্যান্য রোগের উপসর্গ ।অর্থাৎ জ্বর হলে অন্যান্য রোগের ইঙ্গিত পাওয়া
যায় বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা । তবে জ্বর যদি বেশি গুরুতর হয় তা বোঝার
জন্য চিকিৎসকরা কিছু নির্দেশ দিয়ে থাকে । সেগুলো হল ঃ
- রক্ত পরীক্ষা
- প্রসব পরীক্ষা
- মল পরীক্ষা
- থুথু পরীক্ষা
- সি বি সি পরীক্ষা
- এক্স-রে ইত্যাদি ।
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘন ঘন জ্বর হয়
যাদের দেহে ভিটামিন সি এর অভাব রয়েছে তাদের ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে । এবং
ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে । তাই আমাদের উচিত ভিটামিন
সি এবং ভিটামিন ডি জাতীয় যে সকল ফলমূল বা যে সকল খাবারগুলো রয়েছে সে সকল খাবার
নিয়মিত খাওয়া । এবং ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতে পূরণ করা
।
আরও পড়ুন ঃ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ যেনে নিন
এছাড়াও শরীরে অন্যান্য ভিটামিনের চাহিদা সঠিক রাখতে হবে । কারণ আমাদের
শরীরে শুধু জ্বর নয় আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । আর ভিটামিনের
অভাবে আমাদের দেহের নানা রকম অসুখ বিসুখ এবং নানা রকম সংক্রমণ দেখা দেয়
। তাই নিয়মিত আমাদের ভিটামিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং ঘন ঘন জ্বর
থেকে বেঁচে থাকতে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খেতে হবে ।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পারলেন যে ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ
ও প্রতিকার । আমাদের যদি ঘন ঘন জ্বর আসে তাহলে সে জর কি কারণে আসে এবং ঘন ঘন
জ্বর আসলে এর প্রতিকার কি বা এর সমাধান কি সে সকল বিষয় সম্পর্কে এই
আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারলেন ।
এরপরেও যদি কোন কিছু জানার থাকে কিংবা আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে
তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন । এবং এরকম আরো বিভিন্ন পোস্ট
পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করে আমাদের সাথে থাকুন । আশা করি
আর্টিকেলটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন ।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং
কমেন্ট করে জানাবেন । আশা করি ভালো থাকবেন ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url